হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর জন্ম ও প্রাথমিক জীবন কেমন ছিলো islamic Story

 islamic Story


আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব  বিশ্বনবি নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ ও আর্শীবাদের মূর্ত প্রতীক হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার আরবের মক্কা নগরে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ হরেন তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমিনা | হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উর্ধ্বতন একাদশ পুরুষের নাম ছিল ফিহর | তিনি কুরাইশ নামেও প্রসি্দ্ধ ছিলেন | এ কারণে তাঁর বংশধর কুরাইশী নামে খ্যাতি লাভ করে |

নামকরন : হযরত মুহাম্মদ (স.) মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে তাঁর পিতা আবদুল্লাহ বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় গমন করেন। বাণিজ্য শেষে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মদিনার উপকন্ঠে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হযরতের দাদা ছিলেন আবদুল মুত্তালিব। হযরতের জন্মের পর দাদা আবদুল মুত্তালিব নবজাত শিশুর লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং শিশুটির নাম রাখেন মুহাম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত। মাতা আমিনা তাকে আদর করে ডাকতেন, আহবদ, বলে। 


ধাত্রী গৃহে গমন :  
মহানবী (স.) জন্মের পর প্রথম সাত দিন নিজ মায়ের দুধ পান করেন।  অতঃপর আরবের প্রথানুযায়ী শিশু মুহাম্মদ (স.) কে লালন-পালন  জন্যে সাদ গোএের বিবি হালিমাকে মাএী নিযুক্ত করা হয় । তিনি পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বিবি হালিমার গৃহে লালিত-পালিত হন । সেখানে অবস্থানকালে তৎকালীন আরব সমাজের মধ্যে বিশুদ্ধ আরবি ভাষা আয়ত্ত করেন । 


প্রথম বক্ষ বিদীর্ণ বা সিনা চাক :
বিবি হালিমার গৃহ লালিত-পালিত হওয়ার সময় হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বয়স যখন চার বছর মাএ তখন দুজন  ফিরিশতা এসে তাঁর সিনা চাক করে নবুয়ত লাভের উপযোগী করে তোলেন এবং অন্তরের সমস্ত ব্যাধি দূর করে দেন ।


মাতৃক্রোড় বালক মুহাম্মদ :
হযরত মুহাম্মদ (স.) - এর বয়স যখন ছয় বছর তখন তিনি মাতা অামেনার কাছে ফিরে অাসেন । তাঁর এ মাতৃ সান্নিধ্য বেশিদিন স্থায়ী হল না, তিনি মক্কা থেকে পিতা অাবদুল্লাহর কবর যিয়ারত করার জন্য মায়ের সাথে মদিনায় গমন করেন ।  মদিনা থেকে ফেরার পথে আবওয়া, নামক স্থানে মাতা আমিনা অসুস্থ হয়ে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন ।  এ সময় দাসী উম্মে আইমন তাঁকে মক্কায় নিয়ে এসে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে পৌঁছে দেন ।  আবদুল মুত্তালিবের কাছে মাএ দুবছর লালিত-পালিত হন। পরে ৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দাদাকেও হারান ।


চাচার অভিভাবকত্বে বালক মুহাম্মদ (স.) :
দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর নবিজির লালন-পালানের দায়িত্ব পড়ে চাচা আবু তালিবের ওপর ।  চাচা আবু তালিব বালক মুহাম্মদ (স.) কে যথাসাধ্য আদর-যত্নে প্রতিপালন করতে থাকেন । কিন্তু অাবু তালিবের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় মুহাম্মদ (স.) কে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো । তাঁকে চাচার উট ও মেষ চরাতে হতো এবং অবসর সময়ে তিনি মক্কায় তীর্থ যাএীদের পানি পান করাতেন ।  এ সকল কাজ-কর্মে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও তিনি অশ্ব চালনা, বর্শা চালনা, তলোয়ার চালনা প্রভৃতি শিক্ষা গ্রহণ করেন । ১০ বছর বয়সে তাঁর দ্বিতীয় বার সিনা চাক হয়। 



সিরিয়া গমন :
বার বছর বয়সে বলক মুহাম্মদ (স.) চাচা আবু তালেবের সঙ্গে ৫৮২ খ্রিস্টাব্দে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেন ।  এ পরিভ্রমণে খোদাদ্রোহী সামুদ জাতির ধব্বংসাবশেষ অবলোকন ও প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে তাঁর মন এক পরম সত্তার সান্নিধ্য পাবার অাগ্রহ প্রকাশ করে। কথিত আছে, সিরিয়া যাএাকালে পাদ্রী বুহাইরা বালক মুহাম্মদ (স.) কে প্রতিশ্রুত শেষ নবি হিসেবে চিনতে পারেন । তিনি তাঁর চাচাকে নবির ব্যাপারে ইহুদি খ্রিস্টানদের হতে সতর্ক করে দেন । বালক মুহাম্মদ (স.) প্রথমবারের মত জন্মভূমির বাইরে গমন করে বিশাল পৃথিবী এবং ব্যাপক কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেন ।  রসুল (স.) ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তিনবার সিরিয়া গমন করেছিলেন । 


আল-আমীন উপাধি লাভ :
বাল্যকাল থেকেই হযরত মুহাম্মদ (স.) চিন্তাশীল ছিলেন ।  মানুষের দুঃখ- দুর্দশায় তাঁর মন ব্যাথিত হত ।  তাঁর স্বভাব ছিল নরম-প্রকৃতির । তিনি সর্বদা সত্য কথা বলতেন, তাই তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাএ ছিলেন । তিনি কখনও অন্যায় আচরণ করতেন না ।  এমনকি বাল্যকাল থেকেই লাভ ও উযযার নামে কোন বিশেষ কাজ করার কথা হয়ে তিনি বলতেন এ মূর্তিগুলো দোহাই দিয়ে তোমরা আমাকে কিছুই বলো না । হযরত মুহাম্মদ (স.) -এর কর্মনিষ্ঠা, সত্যবাদিতা নম্রতা, আত্নবিশ্বাস প্রভৃতি গুণাবলির জন্য সকলে তাঁকে ভালোমত এবং আল-আমিন, উপাধি দিয়েছিলেন ।  অবস্থা এমন হল যে, মুহাম্মদ নামটি চাপ পড়ে গেল ।  আল-আমীন নামটিই বেশি প্রসিদ্ধ লাভ করল । 


হারবুল ফুজ্জারে অংশগ্রহণ : 
চাচা অাবু তালিবের সাঙ্গে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরে আসার কিছুদিন পরে শুরু হল বিখ্যাত মেলা । এ মেলায় জুয়া খেলা, ঘোড়াদৌড় ও কাব্য প্রতিযোগিতা নিয়ে শুরু হয় এক ভয়াবহ যুদ্ধ । এ যুদ্ধ হারবুল ফুজ্জার, বা অন্যায় সমর বা পাপাচারীদের সমর নামে পরিচিত ।  এ যুদ্ধ পাঁচ বছরকার স্থায়ী হয়েছিল এবং এতে অনেক লোকে প্রাণ হারিয়েছিল ।  যেহেতু এ যুদ্ধ কুরাইশ ও কায়েস বংশের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, সেহেতু হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল । এ যুদ্ধে তিনি নিক্ষিপ্ত তীর সংগ্রহ করে চাচার হাতে তুলে দিতেন । কিন্তু তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি ।


No comments

Powered by Blogger.